ঢাকা,রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪

ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলবে না ১ জুলাই থেকে!

৩০ জুনের মধ্যে নবায়ন না করলে রেজিস্ট্রেশন বাতিল ।। চট্টগ্রামে এরকম যান আছে প্রায় ২৫ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক ::  দশ বছরের অধিক সময় ধরে চলাচল করছে এমন ফিটনেসবিহীন মোটরযান আগামী ১ জুলাই থেকে চলতে পারবে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) বলছে, যেসব মোটরযানের ফিটনেস ১০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে নেই, তাদের আগামী ৩০ জুনের মধ্যে ফিটনেস নবায়ন করতে হবে। নতুবা রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে। সমপ্রতি বিআরটিএ এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করে। গতকাল শুক্রবার বিআরটিএর ফেসবুক পেইজেও এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল ১-এর সহকারী পরিচালক তৌহিদুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন অনেক আগেই কার্যকর হয়েছে। কাজেই এ সিদ্ধান্ত আরো আগে কার্যকর হওয়ার কথা। পরিবহন মালিকদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সময় বাড়ানো হয়েছে। ১ জুলাই থেকে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

১০ বছরের অধিক সময়ের ফিটনেসবিহীন মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল সংক্রান্ত বিআরটিএর পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ২৫ ধারা মোতাবেক বিআরটিএ থেকে মোটরযানের ফিটনেস সার্টিফিকেট গ্রহণের আবশ্যকতা থাকা সত্ত্বেও বিআরটিএর ডাটাবেজ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১০ বছরের অধিককাল ধরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মোটরযানের ফিটনেস নবায়ন করা হয়নি।

এমতাবস্থায়, এসব মোটরযানের মালিকদের চলতি মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে তাদের স্ব-স্ব মোটরযানের ফিটনেস নবায়নের জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। অন্যথায় ১ জুলাইয়ের পর ১০ বছরের অধিককালের ফিটনেসবিহীন মোটরযান ধ্বংসপ্রাপ্ত বা চিরতরে ব্যবহারের অযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা হবে।

দীর্ঘদিন ধরে পরিবহন সেক্টরে অরাজকতা বিরাজ করছে। সারা দেশের মতো চট্টগ্রামেও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, ফিটনেস, রুট পারমিট ও রাস্তায় চলাচলের ক্ষেত্রে সর্বত্র বিশৃক্সখল অবস্থা বিরাজ করছে। নগরীতে চলাচলকারী যানবাহনের বেশিরভাগেরই বৈধ ফিটনেস সার্টিফিকেট নেই। সেই কবে একবার ফিটনেস সার্টিফিকেট নেওয়া হয়েছিল, সেটা দেখিয়ে বছরের পর বছর গাড়ি চলছে। দেখার বা বলার যেন কেউ নেই। অথচ নির্দিষ্ট মেয়াদান্তে যথারীতি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক যানবাহনের ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়নের বিধান রয়েছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্রায় অবাধে যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করে চলেছে হাজার হাজার গাড়ি।

মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩ অনুযায়ী, একবার ফিটনেস সনদ সংগ্রহ করলে তা নবায়নের তারিখ থেকে পরের এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। ফিটনেস সনদ পেতে হলে গাড়িসহ বিআরটিএ কার্যালয়ে হাজির হতে হয়। সেখানে অন্তত ৩০ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ফিটনেস সনদ প্রদান করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআরটিএর এক পরিচালক জানান, বিআরটিএর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকেই ফিটনেস নিতে অনেকে আসেননি। তিনি বলেন, অনেক গাড়ি নিবন্ধন নিলেও নষ্ট হয়ে গেছে। সেই মালিক তো আসবেন না ফিটনেস নিতে।

বিআরটিএর সূত্র মতে, চট্টগ্রামে ফিটনেসবিহীন প্রায় ২৫ হাজার যানবাহন চলাচল করছে। মহানগরীতে ১০/১২ বছর যাবত ফিটনেস নবায়ন করছে না এ ধরনের বিভিন্ন যানবাহনের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। আর জেলায় রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার। এসব যানবাহনের মধ্যে রয়েছে ট্রাক, বাস, মিনিবাস, টেম্পো, সিএনজি টেক্সি, মাইক্রোবাস ইত্যাদি। তবে টেক্সি সবচেয়ে বেশি। অনেক টেক্সি ১৬/১৭ বছর অতিক্রম করেছে, তারপরও জোড়াতালি দিয়ে চলছে।

ফিটনেসবিহীন যানবাহনের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে ট্রাক, মিনি ট্রাক, বাস, হিউম্যান হলার ও টেম্পো। এসব গাড়ি ১০ থেকে ১২ বছর ধরে বিআরটিএ থেকে ফিটনেস নবায়ন না করে চলাচল করছে। এর ফলে সরকার বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। পরিবহন খাতে এই অনিয়ম নিয়ে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও পরিবহন মালিক একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। গাড়ির গ্লাস, লাইট, জানালা ভাঙা। তারপরও রাস্তায় ত্রুটিপূর্ণ এসব যানবাহন ট্রাফিক পুলিশের সামনে বাধাহীনভাবে চলাচল করছে। ত্রুটিপূর্ণ এসব গাড়ি কিভাবে চলছে তার উত্তর মিলছে না।

পাঠকের মতামত: